ট্রাম্পের আক্রমণের মুখেও শান্ত থেকে প্রসংশিত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট
হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের কাছে অপদস্থ হয়েও শান্ত ও সংযত থাকায় দক্ষিণ অফ্রিকাবাসীরা প্রেসিডেন্ট রামাফোসার প্রশংসা করেছে।
হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অতর্কিত আক্রমণাত্মক আচরণের মুখেও নিজেকে শান্ত রেখেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা।
এই ধৈর্য ও সংযমের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকানদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। তবে অনেকেই জানতে চেয়েছেন, এমন বৈঠকে অংশ নেওয়ারই বা প্রয়োজন কী ছিল?
রামাফোসার আশা ছিল, হোয়াইট হাউজে এই বৈঠকের মাধ্যমে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্কের বরফ গলাবেন। কারণ, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে দুই দেশের কূটনৈতিক টানাপড়েন বেড়েছে।
হোয়াইট হাউজের বৈঠকে আলোচনার বড় অংশজুড়েই ট্রাম্প বারবার বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুরা ‘হত্যা ও জমি দখলের’ শিকার। অথচ বাস্তবে দেশটিতে সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছেন কৃষ্ণাঙ্গরাই।
দক্ষিণ আফ্রিকার সংবাদমাধ্যম ডেইলি ম্যাভারিক-এর সাংবাদিক রেবেকা ডেভিস, যিনি নিজেও একজন শ্বেতাঙ্গ, মন্তব্য করেন, “রামাফোসা জেলেনস্কির মতো পরিস্থিতিতে পড়েননি, এটিই বড় কথা।”
তিনি লেখেন, “ওয়াশিংটনে যাওয়ার আগে প্রেসিডেন্টকে বারবার বলা হয়েছিল—প্ররোচনায় পা না দিতে। তিনি ঠিক সেটাই করেছেন।”
এর আগে ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি হোয়াইট হাউজে এক বৈঠকে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে জড়িয়েছিলেন ট্রাম্প এবং সহ-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে।
রামাফোসার সংযম অনেকের প্রশংসা কুড়ালেও প্রশ্ন থাকছে তার এই সফরের যৌক্তিকতা নিয়ে।
জোহানেসবার্গের এক দোকানকর্মী ইউনিয়নের সদস্য সোবেলো মোথা (৪০) বলেন, “আমি মনে করি না এটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। আমাদের যুক্তরাষ্ট্রকে কিছু বোঝানোর প্রয়োজন নেই। আমরা জানি আমাদের দেশে কোনো শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা হচ্ছে না। এই সফর তাই অর্থহীন বলে মনে হয়েছে।”
তবে, রামাফোসা অবশ্য ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন প্রস্তুত হয়েই। তার সফরসঙ্গী ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার জনপ্রিয় শ্বেতাঙ্গ গলফাররা, উদ্দেশ্য ছিল বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা।
ট্রাম্প এদিন দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গদের ওপর ‘গণহত্যা চালানো হচ্ছে’ এমন মিথ্যা অভিযোগ তুলে রামাফোসার মুখোমুখি হন।
বৈঠকের শুরুটা ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ, কিন্তু টিভিতে রিয়েলিটে শো-র সাবেক উপস্থাপক ট্রাম্প কক্ষের আলো কমিয়ে দিতে বলেন এবং তারপর একটি ভিডিও ও কিছু ছাপা নিবন্ধ দেখিয়ে সেগুলোকে শ্বেতাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকানদের ওপর নিপীড়নের প্রমাণ অ্যাখ্যা দেন।
ট্রাম্পের এমন অভিযোগের জবাব দেওয়ার জন্য রামাফোসা প্রস্তুতই ছিলেন, যদিও এমন নাটকীয়তা হয়ত তিনি প্রত্যাশা করেননি।
রামাফোসা শান্ত ও সংযতভাবে সব শুনে যুক্তির মাধ্যমে ট্রাম্পের দাবি খণ্ডনের চেষ্টা করেন এবং ‘অল্পতেই চটে যেতে পারেন’ এমন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানানো বা সমালোচনা থেকে বিরত থাকেন।
রামাফোসা বেশিরভাগ সময়ই সংযত থেকেছেন, ভেবেচিন্তে অল্প কথা বলেছেন। কোনও উস্কানিতেই তিনি সাড়া দেননি। স্যোশাল মিডিয়ায় অনেকেই রামাফোসার এই শান্ত-সংযত আচরণের প্রশংসা করেছেন।
একজন লেখেন , “তিনি (রামাফোসা) গোঁড়ামি এবং মিথ্যার সামনে শান্ত ছিলেন।” আরেকজন লেখেন, “আপনারা অনেকেই হয়ত রামাফোসাকে পছন্দ করেন না। কিন্তু এই মানুষটি ডনাল্ড ট্রাম্প এবং ইলন মাস্কের চেয়েও স্মার্ট।”
Leave a Reply