পাটগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ৬ ভারতীয়কে বাংলাদেশে পুশ ইন
লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ছয়জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশ ইন করেছে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। পরে তাদেরকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
শুক্রবার (৩০ মে) দুপুরে জেলার বুড়িমারী রেল স্টেশন এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
আটকরা হলেন– ভারতের আসাম রাজ্যের গোলাঘাট জেলার জামুগুড়ি গ্রামের মরহুম সেলিম উদ্দিন আহমেদের ছেলে মো: নিজাম আহমেদ (৪৮), একই রাজ্যের গোলাঘাট জেলার মেরাপানির ইসলামপুর গ্রামের মজিবেত গফুরের ছেলে মোঃ আব্দুল গফুর (৫৬), আসামের দরং জেলার দলগাঁও গ্রামের নবী হোসেনের ছেলে মোঃ কিসমত আলী (৬৩), আসামের গোলাঘাট জেলার মেরাপানি গ্রামের নিজাম উদ্দিনের মেয়ে হাফিজা বেগম (৩৫), আসামের দরং জেলার নৌহাটি গ্রামের নূরনবী হোসেনের ছেলে মোঃ রহমত আলী (৩৫) এবং আসামের গোলাঘাট জেলার মেরাপানি গ্রামের আমীর আলীর মেয়ে নুরেজা বেগম (৪৫)।
আটকদের মধ্যে দু’জন নারী ও চারজন পুরুষ রয়েছেন। তাদের কাছে ভারতীয় আধার কার্ডসহ বিভিন্ন কাগজপত্র থাকার পরও বিএসএফ তাদেরকে বাংলাদেশে পুশ ইন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
আটক নিজাম আহমেদ (৪৮) বলেন, ‘আমার জন্ম আসামে। এরপরও ভারতের পুলিশ ও বিএসএফ তাদের কোনো কথা না শুনে বন্দুকের নলের মুখে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে। আমাদের সাথে আরো ছয়জন ছিল। কিন্তু বিজিবি তাদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়নি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা একটি স্কুলে রাতে আশ্রয় নিয়েছিলাম। পরে মানুষকে জিজ্ঞাসা করে বুড়িমারী রেলস্টেশনে রাত যাপন করি। গত ২৮ তারিখ থেকে আমরা এখানে বিভিন্ন লোকের সাহায্যে রয়েছি। খাবারদাবার থেকে শুরু করে সব ধরনের সহযোগিতা বাংলাদেশের মানুষ করেছে। আজ শুক্রবার বিজিবিকে খবর দিলে আমাদের ভারতে ফেরত পাঠানোর জন্য এখানে নিয়ে এসেছে। আমরা যেহেতু ভারতীয় নাগরিক, তাই আমরা ভারতেই থাকতে চাই।’
বিজিবি জানায়, গত ২৮ মে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ লালমনিরহাটের আদিতমারী, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার অন্তত পাঁচটি সীমান্ত পয়েন্ট—দুর্গাপুরের চওড়াটারি, হাতীবান্ধার বনচৌকি এবং পাটগ্রামের আমঝোল, পচা ভাণ্ডার ও ধবলগুড়ি দিয়ে দফায় দফায় প্রায় ৫৮ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে পুশ ইন চেষ্টা করে। তবে বিজিবি ও স্থানীয়দের প্রতিরোধের মুখে বিএসএফ সে সময় তাদের নিজ দেশে ফেরত নিতে বাধ্য হয়। ওই সময় সীমান্তজুড়ে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করে এবং সীমান্তের আকাশে ড্রোনও উড়তে দেখা যায়।
ধারণা করা হচ্ছে, গত বুধবার (২৮ মে) পুশইনের চেষ্টার সময়ই বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে এই ছয়জন ভারতীয় নাগরিক দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে বুড়িমারী রেল স্টেশনে অবস্থান করছিলেন। পরে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে।
আটকরা বিজিবিকে জানিয়েছেন, তাদের ভারতের পুলিশ আটক করে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করেছিল এবং পরে বিএসএফ তাদের বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। এদিকে আটকদের ভারতে ফেরত পাঠানোর জন্য আজ শুক্রবার বিকেলে বুড়িমারী জিরো পয়েন্টে বিজিবি বিএসএফ পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে সেই পতাকা বৈঠকের ফলাফল জানা সম্ভব হয়নি।
সাম্প্রতিক সময়ে লালমনিরহাটসহ দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে পুশইনের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিজিবি কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে আটক বাংলাভাষী নাগরিকদের ‘বাংলাদেশি’ আখ্যা দিয়ে জোরপূর্বক বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা করছে, যা আন্তর্জাতিক আইন ও সীমান্ত চুক্তির লঙ্ঘন। এ পরিস্থিতিতে সীমান্তের অস্থিতিশীলতা নিরসনে দ্রুত কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও উঠেছে।’
এবিষয়ে রংপুর ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ককে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বুড়িমারী কোম্পানি কমান্ডারের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে নায়েব সুবেদার আলীম পরিচয় দিয়ে বলেন, স্যার গোসল করছেন। বিএসএফের সাথে তিনি পতাকা বৈঠক হয়েছে স্বীকার করলেও কি আলোচনা হয়েছে তা জানাতে পারেননি।
এ বিষয়ে পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘যে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে তারা সীমান্তের নোম্যানস ল্যান্ডে অবস্থান করছে। তারা যেহেতু ভারতীয় নাগরিক তাই পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের (আটককৃতদের) ভারতে ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’
Leave a Reply