জাতীয় অঙ্গনে ক্রিকেট পরিস্থিতি
অনাস্থার জবাবে বিসিবি সভাপতি, ‘ওরাই এসব দুর্নীতি করে আমার নামে চাপাচ্ছে’
ক্রিড়া প্রতিনিধি ঢাকা
অনাস্থার জবাবে বিসিবি সভাপতি, ‘ওরাই এসব দুর্নীতি করে আমার নামে চাপাচ্ছে’
‘অনাস্থা চিঠির কোনো সুযোগ গঠনতন্ত্রে নেই, সব অভিযোগ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন’- আট পরিচালকের অনাস্থা নিয়ে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের জবাব।
অনাস্থার জবাবে বিসিবি সভাপতি, ‘ওরাই এসব দুর্নীতি করে আমার নামে চাপাচ্ছে’
ক্রীড়া
‘ওটা পড়ে হাসতে হাসতেই আমার অবস্থা খারাপ’, আট পরিচালকের অনাস্থা চিঠি নিয়ে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া এটি। তার দাবি, সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থার কোনো সুযোগ বিসিবির গঠনতন্ত্রে নেই। দুর্নীতি ও অন্যান্য অভিযোগগুলোকেও বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি। ফারুকের দাবি, ওই বোর্ড পরিচালকরা নিজেরা যা করে আসছেন, সেগুলোই উল্টো তার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে পাঠানো ওই অনাস্থা জ্ঞাপনের চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন আটজন পরিচালক। সুদীর্ঘ সেই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ফারুক আহমেদের স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতিপরায়নতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, একক আধিপত্য ও ঔদ্ধত্যের কারণে নিরুপায় হয়ে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এবং বিসিবিকে একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে’ তার ওপর অনাস্থা আনছেন পরিচালকরা। দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কিছু নমুনাও চিঠিতে তুলে ধরা হয়েছে।
দৈনিক বাংলাদেশ অনুসন্ধানকে ফারুক বললেন, অনাস্থার চিঠি নিয়ে তিনি ভাবিত নন।
“অনাস্থা আনার কোনো সুযোগই তো বোর্ডের গঠনতন্ত্রে নেই! অনাস্থায় কিছু যায়-আসে না। গঠনতন্ত্রের কোথাও এটা নেই, ওরা করলেই তো হলো না।”
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২১ অগাস্ট জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মনোনয়নে বিসিবি পরিচালক হয়ে এরপর সভাপতি নির্বাচিত হন ফারুক। তার সঙ্গেই একই মনোনয়নে বিসিবি পরিচালক হন নাজমুল আবেদীন। এছাড়া বর্তমান বোর্ডে থাকা সব পরিচালকই দায়িত্বে আছে আগে থেকে। ফারুকের দাবি, নিজেদের অপরাধগুলোই তার ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন ওই পরিচালকরা।
“চিঠিটা আমি দেখেছি। পড়ে হাসতে হাসতে আমার অবস্থা খারাপ। ওরা নিজেরা যা করেছে, সেসবই এখন আমার ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। গত ৩-৫-৮-১০ বছর ওরা যা যা করেছেন, সব অপকর্ম কপি-পেস্ট করে শুধু আমার নামটা বসিয়ে দিয়েছে। কাজ সব ওদের, নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে আমার। যেসব অভিযোগ ওরা করেছে, সব প্রযোজ্য ওদের জন্য। ”
“এটা একট বানোয়াট চিঠি, সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি একটা লোক যদি ৯ মাসে এত কিছু করতাম, তাহলে তো সুপারহিউম্যান হয়ে যেতাম! এখানে (চিঠিতে স্বাক্ষর করা) আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান আছে, ফাইন্যান্স, লজিস্টিকস, সবাই আছে। সবাই তো এসবে জড়িত।
গত বিপিএলের পর বিসিবি সভাপতি জানিয়েছেন, এই আসরের টিকেট বিক্রি থেকে মোট আয় সোয়া ১৩ কোটি টাকা। অথচ আগের ১০ আসর মিলিয়ে মোট আয় ছিল ১৫ কোটি।
ফারুকের দাবি, টিকেট বিক্রিতে দুর্নীতি বন্ধ করাসহ নানা জায়গায় অনিয়ম রোধ করাতেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
“বিপিএলের টিকেট বিক্রিতে স্বচ্ছতা এনেছি এবার। আগের বোর্ডগুলোতে দায়িত্বে যারা ছিলেন, তাদের ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি ধরিয়ে দিয়েছি। একজন পরিচালক চেয়েছিল, আগের সিস্টেমেই হোক। কিন্তু আমি তা হতে দেইনি। ওই ১০০ কোটির ভাগ তো টপ টু বটম সবাই পেয়েছে।”
“এখানে দুদক ঢুকেছে, কারণ তারা অনেক অনিয়ম দেখেছে। তারা মনে করেছে, দুদক এনেছি আমি। এজন্য আমার পেছনে লেগেছে। তৃতীয় বিভাগ কোয়ালিফাইংয়ে ৫ লাখ টাকা এন্ট্রি ফি ধরে দলগুলিকে দূরে ঠেলেছে, নিজেদের ক্লাবগুলোকে সুযোগ করে দিয়েছে ভোট বাড়ানোর জন্য। এবার সেখানে ৬০টি দল খেলেছে, সবকিছু ভালোভাবে হয়েছে। এসব ওদের ভালো লাগেনি।”
খেলোয়াড়, নির্বাচক ও এখন প্রশাসক হিসেবে ক্রিকেটে দীর্ঘদিনের পথচলায় কখনও অসততায় জড়াননি বলেই দাবি তার।
“ক্রিকেটের সঙ্গে যে ৪২ বছর ধরে আছি, একটা লোকে বলতে পারবে না ফারুক আহমেদ অসৎ। লোকের ভাবমূর্তি অর্জন করতে সময় লাগে। আমার এটা যারা নষ্ট করছে, অবশ্যই তারা জবাব পাবেই। আমার শত্রুও বলতে পারবে না যে আমি অসৎ।”
আট পরিচালক স্বাক্ষরিত চিঠিতে বুধবারের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। এ দিন রাতেই ফারুক আহমেদের সঙ্গে বৈঠকে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা জানিয়ে দেন, বিসিবি সভাপতির দায়িত্বে পরিবর্তন চান তিনি। ফারুক তখন কয়েক দিন ভাবনার সময় চেয়ে ফিরে আসেন।
সেই ভাবনা তার হয়ে গেছে, পদত্যাগ করবেন না। যদিও তার দাবি, বিসিবি সভাপতি পদের প্রতি লোভ নেই তার। তবে এসব অভিযোগ ঘাড়ে নিয়ে তিনি পদত্যাগ করতে রাজি নন।
“আমার জন্য এটা কোনো আকাঙ্ক্ষিত জায়গা নয়। ক্যামেরা, লোকজন, টুর, এসব আমার সামনে সবসময়ই ছিল। যারা অসৎ, তাদের জন্য এটা মোক্ষম জায়গা। এক-দুই-তিন বছরে জীবন বানিয়ে নিতে পারবে। আমি তো সেসব কারণে আসিনি।”
“টাকা সরানো বা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনেছে। প্রতিটি ট্রানজ্যাকশনের একটি নোটশিট থাকে, সবকটিতে মাহবুব আনাম বা ফাহিম সিনহা স্বাক্ষর করেছে। টাকা জমা দেওয়া বা তোলা, সবকিছুতেই স্বাক্ষর আছে তাদের। দুদকেও সেসব জমা দিয়েছি আমি। আগের বোর্ডের দুর্নীতি না ধরলে আমি আরামে দায়িত্বে থাকতে পারতাম। এখন আমার বিরুদ্ধে কথা বলে বা অভিযোগ করে তো আমার ভালো কাজগুলো থেকে বিরত রাখতে পারবেন না! আমি কেন এসব অভিযোগ নিয়ে চলে যাব?”