বিশ্বের খবর
৫০% শুল্ক? ট্রাম্পের হুমকির জবাবে ইইউ চায় ‘সম্মান’
“ইইউ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য অতুলনীয়; হুমকি নয়, পারস্পরিক শ্রদ্ধা-সম্মানের ভিত্তিতে এটি পরিচালিত হওয়া উচিত। আমরা আমাদের স্বার্থ রক্ষায় প্রস্তুত,” বলেছেন ইইউ’র বাণিজ্য কমিশনার মারোস সেফকোভিচ।
৫০% শুল্ক? ট্রাম্পের হুমকির জবাবে ইইউ চায় ‘সম্মান।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাণিজ্য প্রধান মারোস সেফকোভিচ বলেছেন, হুমকি নয়, ‘সম্মানের’ ভিত্তিতে তাদের ২৭ দেশের জোট যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে বদ্ধপরিকর।
ইইউ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো সব পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের হুমকির পর তার এ প্রতিক্রিয়া এল।
“উভয় দেশের জন্য উপযোগী একটি চুক্তি নিশ্চিত করতে ইইউ সম্পূর্ণরূপে নিয়োজিত, অঙ্গীকারাবদ্ধ,” মার্কিন বাণিজ্য দূত জেমিসন গ্রিয়ার ও বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিকের সঙ্গে ফোনালাপের পর সেফকোভিচ এমনটা বলেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
ইইউ’র এ বাণিজ্য কমিশনার আরও বলেছেন, “ইইউ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য অতুলনীয়; হুমকি নয়, পারস্পরিক শ্রদ্ধা-সম্মানের ভিত্তিতে এটি পরিচালিত হওয়া উচিত। আমরা আমাদের স্বার্থ রক্ষায় প্রস্তুত।”
শুক্রবার আগের দিকে ট্রাম্প চলমান ইইউ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে ১ জুন থেকে ইইউ পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন।
“তাদের সঙ্গে আলোচনায় কিছুই হচ্ছে না,” সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
সঙ্গে এও বলেছিলেন, যেসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে বানানো বা সংযোজিত হবে সেগুলোর ওপর কোনো শুল্ক থাকবে না।
“আমি কোনো চুক্তির দিকে তাকিয়ে নেই, আমরা চুক্তি ঠিক করে রেখেছি,” পরে সাংবাদিকদের বলেন তিনি। ইউরোপের কোনো কোম্পানি যদি যুক্তরাষ্ট্রে বড়সড় বিনিয়োগ করে তাহলে শুল্ক আরোপ পিছিয়ে দেওয়ার কথা ভাববেন বলেও তিনি তখন জানান।
ইইউ ওয়াশিংটনের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার। মার্কিন সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর ইইউ যুক্তরাষ্ট্রে ৬০ হাজার কোটি ডলারের বেশি মূল্যের পণ্য পাঠিয়েছে, কিনেছে ৩৭ হাজারে কোটি ডলারের পণ্য।
ট্রাম্পের হুমকির পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকার বেশি শুল্কে উভয় পক্ষেরই ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে সতর্ক করেছে।
“আমাদের এ পথে যাওয়ার দরকার নেই। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আলোচনাই সবচেয়ে সেরা ও একমাত্র টেকসই উপায়,” বলেছেন আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিহল মার্টিন।
ফ্রান্সের বৈদেশিক বাণিজ্য ও প্রবাসী বিষয়ক দূত লরঁ সাঁ মার্তাঁ বলেছেন, “আমরা উত্তেজনা কমানোর আগের লাইনেই আছি, কিন্তু আমরা প্রতিক্রিয়া দেখাতেও প্রস্তুত।”
জার্মান অর্থমন্ত্রী ক্যাথেরিনা রাইখে বলেছেন, “ইউরোপিয়ান কমিশন যেন আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি সমাধানে পৌঁছাতে পারে তা নিশ্চিতে আমরা সবকিছুই করবো।”
আর ডাচ প্রধানমন্ত্রী ডিক শুফ সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি বাণিজ্য আলোচনায় ইইউ’র কৌশলের সমর্থক।
“যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মধ্যেই শুল্ক ওঠানামা করতে আগেও দেখেছি আমরা,” বলেছেন তিনি।
গত মাসে ট্রাম্প ইইউ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া বেশিরভাগ পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। পরে তিনি আরও আলোচনার সুযোগ দিতে ওই শুল্ক ৮ জুলাই পর্যন্ত ১০ শতাংশ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিযোগ, ইইউ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অনৈতিক বাণিজ্য সুবিধা নিচ্ছে। তারা বেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিক্রি করছে, অথচ কিনছে কম। গাড়ি ও কৃষিপণ্য নিয়ে ইইউর নীতির কড়া সমালোচনাও করেছেন তিনি।
শুক্রবার ট্রাম্প কেবল ইইউর ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপেরই হুমকি দেননি, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বানানো না হলে অ্যাপলের আইফোনেও ন্যূনতম ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কেবল আইফোনই নয়, যে কোনো স্মার্টফোনকেই এ শুল্কের মুখোমুখি হতে হবে, পরে বলেছেন তিনি।